ফেব্রুয়ারির এক শীতল দিনে,
আমি বেড়িয়ে পড়েছিলাম
আমার অতীত,সম্পর্কহীন কৌম থেকে।
আমার গন্তব্য- সেই মহাজনপদ,
যার বাহন প্রাগৈতিহাসিক স্টিমার,
যা সহজেই আক্রান্ত করে
সাবেক,উপনিবেশিক নস্টালজিয়ায়।
রোদে-জলে পোড়া বর্ষিয়ান রেলিং,
বার্মিজ সেগুন ফাটলে,
রঙের পোঁচ পড়েনি বহুদিন,
সাদা,নিস্তব্ধ কেবিনেও আর
আসেনি কোন মধুচন্দ্রিমারত দম্পতি।
কেউ কি লক্ষ্য করেনি ?
কেউ কি দেখেনি চেয়ে ?
কেউ কি করেনি অনুকম্পা ?
এই সামান্য ভারবাহী নৌযানকে!
আমার ক্রমশ মনে হতে থাকে
আমিই এই স্টিমারের একনিষ্ঠ,
একান্ত,নিবিড় পাঠক।
আমিই টুকে নিচ্ছি সহস্র স্মৃতিকোষে
সময়ের পুঞ্জ পুঞ্জ অনুলিপি।
প্রশস্ত মোহনা থেকে উজানের পথে,
ম্লান থেকে ম্লানতর সবুজের দিকে
এইসব পথে ছুটে গেছে
বারবার,আবার,অনবরত
নির্ভুল কম্পাসের নির্দেশে।
এইসব জলজ পথ,যা ছুঁয়েছে
বিবর্ণ মরিচা-রঙা জেটি,
বিদায়প্রজ মানুষের ভীড়,
নাছোড়বান্দা শৈবালস্তুপ,
শীর্ণকায়া ধানসিঁড়ি,
আর ভাগ্যহত শুশুকের কংকাল।
কিন্তু তবুও রাত্রি নেমেছিল।
সেই শীতার্ত ভ্রমণে,
কালো হয়েছিল সবুজেরা,
অনুসরণপ্রিয় গাংচিলেরা হয়েছিল
নিরুদ্দেশ।
শুধু কালো নদীর বুকচেরা
ফেনারা আরো শাদা হয়ে উঠেছিল।
নিঃসঙ্গ শোঁ শোঁ ডেকের আহ্বানে,
আমি বসেছিলাম ব্যবহারজীর্ণ চেয়ারে।
ভুলেছিলাম পার্থিব সময়ের
টিক টিক,
শীতের তীক্ষ্ণ কটাক্ষ,
কিংবা আমার অরক্ষিত কেবিনকে।
হঠাৎই দেখা হয়েছিল,
সেইসব অপার্থিব নৌকাদের সাথে,
হলুদ শুধু হলুদ বাতির
(অন্য কোন রঙের নয়)।
ফুটন্ত খৈ এর মতোন,
অথবা কমলা বোঁটার
শিউলী ফুলের মতোন,
এখানে,ওখানে-
মেঘনার সমস্ত রূপালি,উদোম
নরোম বুক জুড়ে।
রাত কেটেছিল নিস্তরঙ্গ টেউয়ে,
ক্ষয়াটে হলুদ চাঁদ আর
বিরতিহীন ইঞ্জিনের
অপূর্ব,ক্লান্তিহীন প্রগলভতায়।
ভোরও এসেছিল তাঁর অনিবার্যতা নিয়ে।
কুয়াশা মোড়া বন্দরে,
আমার প্রথম পদার্পণেই
ফিরেয়েছিলাম আমার চোখ।
আমিও তাকিয়েছিলাম,
তবে ঠিক অন্যদের মতো নয়,
আরো অবনত দৃষ্টিতে,
আরো তীব্র প্রাবল্যে,
ভারী হয়ে আসা কোটরের
অভিকর্ষতায়।
আমার শীতার্ত,মলিন ঠোঁট
উন্মুক্ত হয়েছিল,
বের হয়েছিল বিবর্ণ,অস্ফুট স্বর।
ভেসে গিয়েছিলো
সেইসব অপরিণত পংক্তিমালা,
তীব্র শীতের মায়াহীন ঘূর্ণিতে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment